ত্বকের যত্নে ভাইরাল সব টিপস কি ভালো?

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সময় ভালো ‘স্কিন কেয়ার’ বা ত্বকের যত্নের টিপস পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি ‘ভাইরাল’ হয়ে ওঠে, যা ত্বকের জন্য মোটেও সঠিক নয়।

বিশেষজ্ঞরা এমন ধরনের টিপসগুলো একেবারেই ব্যবহারে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন।

তারা অনেক সময় ভাইরাল হওয়া ‘স্কিন কেয়ার ট্রেন্ড’ নিয়ে আলোচনা করেন এবং কখনও কখনও এ টিপসগুলোর ক্ষতিকর দিকও ব্যাখ্যা করেন।



রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞরা এমন কিছু ‘ভাইরাল স্কিন কেয়ার ট্রেন্ড’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আর সেসব ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলছেন।

মেইকআপ ওয়াইপস দিয়ে পরিষ্কার করা

খুব জরুরি পরিস্থিতিতে বা নিয়মিত মেইকআপ তুলতে ‘মেইকআপ ওয়াইপস’ ব্যবহার করেন অনেকেই। এছাড়া সাধারণ-ভাবে ত্বক পরিষ্কারের পর বা আগেও ওয়াইপস ব্যবহার করা যেতে পারে।

তবে এগুলো কখনও ‘ফেইশল ক্লিনজার’য়ের পরিবর্তে ব্যবহার করা উচিত নয়।

কানাডা ভিত্তিক ত্বক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা হান বলেন, “ওয়াইপস খুব বেশি ব্যবহার করা হলে এটি ত্বকে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করতে পারে বা ত্বকের প্রাকৃতিক বাঁধন বা ‘বেরিয়ার’ ভেঙে দিতে পারে। ফলে ত্বক ঘষার পরিবর্তে নরম ক্লিনজার ব্যবহার করা উচিত।”


চোখের পাপড়িতে ক্যাস্টর অয়েল লাগানো


এই ভাইরাল ‘বিউটি ট্রেন্ড’টিকে পুরোপুরি লাল সঙ্কেত দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে এটি ব্যবহার করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

মার্কিন ত্বক বিশেষজ্ঞ মায়া থোসানি বলেন, “ক্যাস্টর অয়েল খুবই হাইড্রেটিং বা আর্দ্রতা বর্ধক। আর এটি ত্বক সুরক্ষিত রাখতে অল্প কিছু পরিমাণে উপকারী হতে পারে। তবে চোখের পাপড়িতে ব্যবহারে কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে বিশেষ করে চোখের ভেতরে চলে যায়। অতিরিক্ত ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করলে সংক্রমণ এবং অঞ্জনির সৃষ্টি হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “ক্যাস্টর অয়েল লম্বা করতে পারে না, তবে এটি চুলের গোড়াকে রক্ষা করে এবং ভেঙে যাওয়ার হার কমাতে সাহায্য করতে পারে।”

মাইসেলার ওয়াটার ‍দিয়ে স্ক্রাব

মাইসেলার ওয়াটার এ সময়ের অন্যতম সেরা রূপচর্চার পণ্য হিসেবে ধরা হয়। তবে সঠিক উপায়ে ব্যবহার করা প্রয়োজন। মেইকআপ ও ত্বকের ময়লা তোলার জন্য এই পণ্যটি ব্যবহার করা হয়।

ক্রিস্টিনা হান বলেন, “মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহারের পর সাধারণত ত্বকে রেখে দেওয়া যায়, তবে এটি দিয়ে পরিষ্কার করতে হলে হালকা গরম পানিতে বা মৃদু ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। কোনোভাবেই শুকনা কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে ত্বক ঘষে মাইসেলার ওয়াটার তোলা যাবে না। এটি সংবেদনশীল অথবা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী।”

হায়ালুরন পেনস ব্যবহার করা

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, হায়ালুরন পেনস ব্যবহার করা উচিত নয়। এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে ত্বকে হায়ালুরনিক অ্যাসিডকে উচ্চ চাপে নিডল ছাড়া ‘প্লাম্পিং’ করা হয়।

প্রথমে আকর্ষণীয় মনে হলেও, এগুলো আসলে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়।

টেক্সাস ভিত্তিক ত্বক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিনা কলিন্স সতর্ক করে বলেন, “হায়ালুরন পেন্স নিয়ন্ত্রণহীন এবং এটি ত্বকে অসমান, ফোলা ভাব, কালশিটে দাগ, এমনকি মারাত্মক সংক্রমণ ঘটাতে পারে।”

এই পদ্ধতি পেশাদার পদ্ধতিগুলোর থেকে আলাদা হয়। তাই এমন সেবা নেওয়ার আগে সঠিক স্থানে এবং নিরাপদভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে পেশাদারের কাছে যাওয়াই ভালো। যাতে নিরাপদ ফলাফল পাওয়া যায়।

অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ক্লিনজার ব্যবহার করা

বিশেষজ্ঞদের মতে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ক্লিনজার ব্যবহার একটি ভুল ধারণা হতে পারে। এই পণ্যগুলো অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ত্বকের প্রয়োজনীয় তেল কমে যায় ফলে চামড়ার মাইক্রোবায়োম’কে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ক্রিস্টিনা কলিন্স বলেন, “যতটা সম্ভব সাধারণ ক্লিনজার ব্যবহার করা ভালো। অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ক্লিনজার শুধুমাত্র হাতে ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত। ত্বক পরিষ্কারের জন্য খুব বেশি শক্তিশালী উপাদান ব্যবহার না করা একেবারেই উচিত নয়।”

ক্যানোলা অয়েল ত্বকে ব্যবহার করা

ত্বকের জন্য অনেক প্রাকৃতিক এবং উন্নত বা ভালো মানের তেল রয়েছে। তবে ক্যানোলা অয়েল কোনোভাবেই এর মধ্যে পড়ে না।

ক্রিস্টিনা কলিন্স বলেন, “ক্যানোলা অয়েল যথেষ্ট সস্তা এবং প্রাকৃতিকভাবে বিপণন করা হলেও এটি ত্বকে থাকা ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। ফলে ব্রণ প্রবণ বা তৈলাক্ত ত্বকে আরও বেশি ব্রণ হতে পারে। তাছাড়া এই তেল জোজোবা বা স্কোয়ালেন বা জলপাই তেলের মতো উপকারিতা দেয় না।”

আরও পড়ুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ